The news is by your side.

Interview Tips: চাকরির ইন্টারভিউতে সফল হওয়ার সেরা ১০টি টিপস

সঠিক প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডকে যেভাবে জয় করবেন।

1

চাকরির ইন্টারভিউ—এই একটি শব্দই আমাদের অনেকের মনে ভীতি তৈরি করে। অনেক যোগ্য প্রার্থীও ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে ঘাবড়ে যান এবং নিজেদের সেরাটা তুলে ধরতে ব্যর্থ হন। একজন এইচআর ম্যানেজার হিসেবে আমি দেখেছি, ইন্টারভিউ আসলে কোনো পরীক্ষা নয়, এটি হলো নিজেকে উপস্থাপন করার একটি সুযোগ। আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী, আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে কতটা জানেন এবং আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন, ইন্টারভিউ বোর্ড মূলত সেটাই দেখতে চায়।

চাকরির ইন্টারভিউতে সফল হওয়ার সেরা ১০টি টিপস

সঠিক প্রস্তুতি এবং কিছু কার্যকরী কৌশল আপনাকে এই ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। এখানে আমি এমন ১০টি সেরা চাকরির ইন্টারভিউ টিপস তুলে ধরব, যা আপনাকে ইন্টারভিউয়ের আগে, চলাকালীন এবং পরেও সফল হতে সাহায্য করবে।

১. প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে গবেষণা করুন

ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে, আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন, তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। তাদের লক্ষ্য, মিশন, ভিশন, পণ্য বা সেবা এবং সাম্প্রতিক অর্জনগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখুন। যখন আপনি ইন্টারভিউতে বলবেন, “আমি দেখেছি আপনাদের প্রতিষ্ঠানটি এই কাজটি খুব ভালোভাবে করছে এবং আমি বিশ্বাস করি আমার দক্ষতা দিয়ে এই ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারব,” তখন ইন্টারভিউয়ার বুঝতে পারবেন যে আপনি এই চাকরির ব্যাপারে সত্যিই আগ্রহী। এটি তাদের উপর একটি অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

২. চাকরির বিবরণ ভালোভাবে পড়ুন

ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে চাকরির বিবরণ (Job Description) একাধিকবার পড়ুন। সেখানে কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা ভালোভাবে বুঝুন। এরপর আপনার সিভি-এর সাথে সেই দায়িত্বগুলো কীভাবে মিলে যায়, তা নোট করে রাখুন। ইন্টারভিউতে যখন আপনাকে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন আপনি সরাসরি সেই দায়িত্বগুলোর সাথে মিলিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারবেন। এতে ইন্টারভিউয়ার বুঝতে পারবেন আপনি এই চাকরির জন্য কতটা যোগ্য। এটি ইন্টারভিউ প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩. পেশাগত পোশাক নির্বাচন করুন

একটি প্রবাদ আছে, “First impression is the last impression”। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে আপনার প্রথম ইমপ্রেশন তৈরি হয় আপনার পোশাকের মাধ্যমে। তাই এমন পোশাক পরুন যা মার্জিত এবং পেশাদার। সাধারণত হালকা রঙের শার্ট, প্যান্ট, এবং জুতা উপযুক্ত। আপনার পোশাক পরিচ্ছন্ন এবং ইস্ত্রি করা আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন। এটি আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তুলবে।

৪. সময়মতো পৌঁছান এবং প্রস্তুত থাকুন

ইন্টারভিউ শুরুর অন্তত ১০-১৫ মিনিট আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি কিছুটা শান্ত হওয়ার এবং পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সময় পাবেন। দেরিতে পৌঁছানো একটি খারাপ ইমপ্রেশন তৈরি করে। ইন্টারভিউতে ঢোকার আগে আপনার সিভি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র একটি ফাইলে সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখুন।

৫. বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে মনোযোগ দিন

আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনার আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। ইন্টারভিউয়ারের সাথে হ্যান্ডশেক করার সময় দৃঢ়ভাবে হাত মেলান। চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন, হাত নাড়াচাড়া না করে স্বাভাবিকভাবে রাখুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন এবং মুখ থেকে হাসির রেখা যেন মিলিয়ে না যায়। এগুলো আপনার আত্মবিশ্বাসী মনোভাব প্রকাশ করবে।

৬. আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন

ইন্টারভিউতে কথা বলার সময় স্পষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে কথা বলুন। আপনি কী বলতে চান, তা আগে থেকেই গুছিয়ে নিন। তাড়াহুড়ো করে বা বেশি জোরে কথা বলবেন না। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে যদি কিছুটা সময় লাগে, তবে স্বাভাবিকভাবে বলুন, “আমি একটু ভেবে বলছি।” এতে আপনার উপর ইন্টারভিউয়ারের বিশ্বাস বাড়বে। এটি ইন্টারভিউতে সফল হওয়ার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম।

৭. ইন্টারভিউয়ারকে প্রশ্ন করুন

ইন্টারভিউ শেষে সাধারণত আপনাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এই সুযোগটি কখনো হাতছাড়া করবেন না। প্রশ্ন করা আপনার আগ্রহ প্রকাশ করে এবং আপনি যে দায়িত্বশীল, তা প্রমাণ করে। আপনি প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ, দলগত কাজ, বা আপনার ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন: “এই পদের জন্য আগামী ৬ মাসে আপনাদের প্রধান প্রত্যাশা কী?”

৮. প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় গল্প বলুন

একটি প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে, আপনার অভিজ্ঞতা থেকে একটি ছোট গল্প বলুন। যেমন: যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, “আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কী?”, আপনি বলতে পারেন, “আমি অতীতে সময় ব্যবস্থাপনায় কিছুটা দুর্বল ছিলাম। কিন্তু পরে আমি একটি নির্দিষ্ট টুল ব্যবহার করে এবং নিজের জন্য একটি রুটিন তৈরি করে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছি। এখন আমি এই বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক ভালো।” এতে আপনার দুর্বলতার পাশাপাশি আপনার সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাও প্রকাশ পাবে।

৯. আপনার সফলতার গল্প তুলে ধরুন

আপনার সিভি-তে যা লেখা আছে, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শিখেছেন এবং কী অর্জন করেছেন। ইন্টারভিউতে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলার সময়, শুধু কাজের বিবরণ না দিয়ে, বরং আপনার সফলতার গল্প তুলে ধরুন। যেমন, “আমি আমার পূর্বের প্রতিষ্ঠানে এই প্রজেক্টটি সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০% খরচ কমাতে সাহায্য করেছিলাম।”

১০. ইন্টারভিউয়ের পর ফলো-আপ করুন

ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইন্টারভিউয়ারকে একটি ফলো-আপ ই-মেইল পাঠান। ই-মেইলে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান এবং চাকরির প্রতি আপনার আগ্রহ পুনরায় প্রকাশ করুন। এটি আপনার পেশাদারিত্ব এবং দায়বদ্ধতার পরিচয় দেবে।

চাকরির ইন্টারভিউতে সফল হওয়া কেবল ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না। এটি সঠিক প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস এবং স্মার্ট কৌশলের সমন্বয়। এই ১০টি টিপস আপনাকে ইন্টারভিউয়ের প্রতিটি ধাপে আরও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাবই আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই প্রস্তুতি নিন, আত্মবিশ্বাসী হন এবং ইন্টারভিউ বোর্ডকে জয় করুন।

সম্পর্কিত আর্টিকেলকত বছর বয়স পর্যন্ত অনার্সে ভর্তি হওয়া যায়: বিস্তারিত গাইড

Leave A Reply

Your email address will not be published.