ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড নিয়ে জটিলতা: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে ভোগান্তি, প্রণোদনা না পাওয়ার অভিযোগ
Freelancers Face Hurdles Opening Bank Accounts Without ID Cards, Despite No Official Mandate
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড: দেশে ফ্রিল্যান্সিং খাতের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নতুন এক জটিলতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড না থাকলে ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের কোনো কার্ড বাধ্যতামূলক করেনি।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
অন্যদিকে, এই কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সময় ফ্রিল্যান্সারদের ৪ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবে দেওয়া হচ্ছে না, যা দেশের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি, প্রতিবছর কার্ড নবায়নের জন্য দেড় হাজার টাকা (১৫০০/-) খরচ হওয়ায় অনেকেই এই পরিচয়পত্র নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
কেন এই জটিলতা?
২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস) নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেওয়ার কাজ শুরু হয়। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে এই আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করেনি। এর পরও বিভিন্ন ব্যাংক ফ্রিল্যান্সারদের অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আইডি কার্ডের তথ্য চাইছে।
ভুক্তভোগী একজন ফ্রিল্যান্সার মিজানুর রহমান জানান, দুই মাস আগে ব্র্যাক ব্যাংকের মিরপুর শাখায় ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষায়িত ‘ম্যাট্রিকস অ্যাকাউন্ট’ খুলতে গেলে তাদের প্রথম শর্তই ছিল ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড লাগবে। তিনি তার ফ্রিল্যান্স কাজের প্রোফাইল, সনদ, রেমিট্যান্স সনদ, ক্লায়েন্ট ইনভয়েস, ট্যাক্স রিটার্নের প্রমাণাদি দেওয়ার পরও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হয়নি।
আরও প্রতিবেদন পড়ুন: ময়মনসিংহের সেরা ১০টি কলেজ: পরিচিতি ও ভর্তি গাইড
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ম্যাট্রিকস অ্যাকাউন্ট খুলতে ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ডের তথ্য দিতে হবে। পুরোনো একটি ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড থাকলেও, সেটি নবায়ন করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে এবং মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে ভেবে তিনি নবায়ন করেননি। অবশেষে, দুই-তিন মাস ধরে বিভিন্ন তথ্য জমা দেওয়ার পর কিছুদিন আগে তিনি অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরেছেন।
‘ভুঁইফোড়’ সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান
টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার ও আপওয়ার্ক বাংলাদেশ গ্রুপের অ্যাডমিন কাজী মামুন এই পরিস্থিতিকে ‘ভুঁইফোড় সংগঠন’ বিএফডিএস-এর কর্মকাণ্ডের ফল বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই আইডি কার্ড না নেওয়ায় ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকে ব্যাংকিং তথ্য হালনাগাদ করতে গেলে তারা ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড নামের একটি সনদ চায়। এই কার্ড ছাড়া ভেরিফিকেশন করার পন্থা জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এই কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক।
পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা চাওয়া হলে তারা দেখাতে ব্যর্থ হয় এবং স্বীকার করে যে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক নয়। কাজী মামুনের দাবি, ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড মূলত পুরোটাই ব্যক্তিগত সার্থ সিদ্ধির জন্য একটি মহল চালু করেছিল। দেশে রেমিট্যান্স নিয়ে আসার প্রক্রিয়া সহজ না করে এই ধরনের অহেতুক সনদগুলো জটিলতা তৈরি করছে। তিনি ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংকিং খাত দুর্নীতিমুক্ত করার এবং এই ধরনের ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
কুমিল্লার জায়ান্ট মার্কেটার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাসুম বিল্লাহ ভূঁইয়াও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তথাকথিত বেসরকারি সংগঠনের দেওয়া ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড কেন বাধ্যতামূলক করা হবে? একজন ফ্রিল্যান্সারের পরিচয় যাচাইয়ের দায়িত্ব বিএফডিএস কোন যোগ্যতায় পেয়েছিল, বিষয়টা অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে।” তার মতে, ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড যদি করতেই হয়, তবে সরকার সরাসরি এই উদ্যোগ নিক।
আইসিটি বিভাগ ও সরকারের আশ্বাস
বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) সভাপতি তানজীবা রহমান অবশ্য এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানিয়েছেন, ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দেয় আইসিটি বিভাগ, এবং তারা শুধুমাত্র কারিগরি সমর্থন দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের অনুমতি ছাড়া তারা কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।
অভিযোগের বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে জানান, ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে কোন ধরনের জটিলতায় ভুগছেন এবং আগের সরকার কী ধরনের কাজ করেছে, সে সম্পর্কে জানার জন্য ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করলে সবচেয়ে ভালো হবে।
আরও প্রতিবেদন পড়ুন: একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ২০২৫-২৬: নটর ডেম, হলি ক্রস, সেন্ট যোসেফ ও সেন্ট গ্রেগরীতে ভর্তির বিস্তারিত গাইড
তিনি ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড বা বিশেষ পরিচিতির চেয়ে এনআইডি-ভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন, যা একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। তার মতে, সেই তথ্যভান্ডারে নাম থাকলে ব্যাংকগুলো ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করবে।
ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জটিলতা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “আমার মনে হয় মতবিনিময় সভার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশনা উঠে আসবে। ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে সরকার খুবই আন্তরিক। আমরা ফ্রিল্যান্সারদের কথা শুনতে চাই। আর সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে চাই।”
আরও প্রতিবেদন পড়ুন: ঢাকা বোর্ডের সেরা ১০ কলেজ তালিকা: উচ্চশিক্ষা ও ভর্তি গাইডলাইন
[…] আরও প্রতিবেদন পড়ুন: ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড নিয়ে জটিলত… […]