The news is by your side.

অ্যাপেক্সকে ছাড়িয়ে মুনাফায় বাটা, উৎপাদন খরচ ও সুদের বোঝা কারণ

Bata Shines in Profitability While Apex Leads in Revenue: A Deep Dive into Q1 2025 Financials

2

জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫ প্রান্তিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারকে ছাড়িয়ে বাটা শু এর ৩৭ কোটি টাকা মুনাফা। কম উৎপাদন ব্যয় ও ব্যাংকঋণের সুদই বাটার সাফল্যের কারণ, বিস্তারিত পড়ুন আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি–মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুতার বাজারে ব্যবসার দিক থেকে দেশীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শুর চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তবে, মুনাফার দৌড়ে অ্যাপেক্সকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাটা শু। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়া এবং ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি—মূলত এই দুটি কারণে অ্যাপেক্স ব্যবসা বেশি করেও মুনাফায় পিছিয়ে পড়েছে।

ব্যবসা ও মুনাফার তারতম্য: প্রথম তিন মাসের চিত্র

গত জানুয়ারি–মার্চে জুতার দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ৫৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। একই সময়ে বহুজাতিক জুতা কোম্পানি বাটা শু ব্যবসা করেছে ৩৫৮ কোটি টাকার। সেই হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স ১৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ৫১ শতাংশ বেশি আয় করেছে।

তবে, মুনাফার চিত্রে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাটা শু মুনাফা করেছে ৩৭ কোটি টাকা। সেখানে অ্যাপেক্সের মুনাফা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ, অ্যাপেক্সের চেয়ে ৫১ শতাংশ কম ব্যবসা করেও বাটা শু প্রায় ৩৬ কোটি টাকা বেশি মুনাফা করেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে সম্প্রতি এই দুটি কোম্পানি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে।

মুনাফায় বাটার এগিয়ে থাকার মূল কারণ: উৎপাদন ব্যয় ও সুদ

কোম্পানি দুটির জানুয়ারি–মার্চের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মুনাফার এই বড় তারতম্যের দুটি প্রধান কারণ উঠে এসেছে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩৫৮ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে বাটা শুর পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, তাদের আয়ের ৫৪ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাপেক্সের ৫৪০ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। এর মানে, কোম্পানিটির আয়ের ৭৭ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে ব্যয় হয়েছে। তুলনামূলকভাবে দেখা যায়, ১০০ টাকা আয় করতে বাটার উৎপাদন খরচ যেখানে ৫৪ টাকা, সেখানে অ্যাপেক্সে ১০০ টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ৭৭ টাকা। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণেই বেশি ব্যবসা করেও অ্যাপেক্স মুনাফায় পিছিয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুনএকাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ২০২৫-২৬: নটর ডেম, হলি ক্রস, সেন্ট যোসেফ ও সেন্ট গ্রেগরীতে ভর্তির বিস্তারিত গাইড

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ বাটার খরচ ছিল প্রায় ছয় কোটি টাকা। একই সময়ে এই খাতে অ্যাপেক্সের খরচ ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এই উচ্চ সুদ ব্যয়ও অ্যাপেক্সকে মুনাফার ক্ষেত্রে বাটার চেয়ে পিছিয়ে দিয়েছে।

কোম্পানিগুলোর ব্যাখ্যা

মুনাফায় পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) দিলীপ কাজুরি বলেন, “বাটার তুলনায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি। এ কারণে বাটার চেয়ে বেশি ব্যবসা করেও আমরা মুনাফায় পিছিয়ে রয়েছি।” তিনি আরও জানান, বাটা তাদের জুতার বড় অংশ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করে এবং দেশজুড়ে শোরুমগুলোর কর্মীদের বড় অংশও আউটসোর্সিংয়ে পরিচালিত হয়। কিন্তু অ্যাপেক্সের পণ্য তৈরি হয় নিজস্ব কারখানায় এবং তাদের আউটলেটগুলোও পরিচালিত হয় নিজস্ব কর্মী দিয়ে। এ কারণে অ্যাপেক্সের উৎপাদন খরচ বেশি হয়। কাজুরি আরও যোগ করেন, “আমরা পণ্যের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করি না। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রার বিনিময় হারসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় পণ্যের দাম খুব বেশি বাড়েনি। এ কারণেও আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে।”

অন্যদিকে, বাটা বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঈদের কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাটা ভালো ব্যবসা করেছে। এই সময়ে উৎপাদন সক্ষমতা সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে। দর-কষাকষির মাধ্যমে অনুকূল শর্তে কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার ফলেই প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ভালো মুনাফা করেছে। বাটা বাংলাদেশ আরও জানিয়েছে, তারা সাত বছর ধরে চামড়া ও পাদুকা খাতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে এবং ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক ও কর বাবদ মোট ২৮১ কোটি টাকার বেশি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

পুরো বছরের আর্থিক চিত্র: ২০২৩-২৪ অর্থবছর

দেশে জুতার বাজারে বর্তমানে অ্যাপেক্স ও বাটা শীর্ষ দুই কোম্পানি। ব্যবসার ক্ষেত্রে অ্যাপেক্স বহুজাতিক বাটাকে অনেক আগেই পেছনে ফেলেছে; কিন্তু মুনাফায় এখনও বাটার চেয়ে পিছিয়ে আছে।

অ্যাপেক্সের আর্থিক বছর: জুলাই–জুন মাসকে ঘিরে হিসাব করা হয়। সর্বশেষ হিসাব বছর ছিল ২০২৩–২৪ অর্থবছর। ওই বছর কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার। এর বিপরীতে হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে অ্যাপেক্সের ১০০ টাকা আয় করতে পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে ৭০ টাকা।

বাটা শুর আর্থিক বছর: পঞ্জিকা বছরের (জানুয়ারি–ডিসেম্বর) সঙ্গে মিলিয়ে হিসাব করা হয়। ২০২৩ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরে বাটা শু ব্যবসা করেছে ৯৮৮ কোটি টাকার। এর বিপরীতে বহুজাতিক কোম্পানিটি বছরের শেষে মুনাফা করেছিল ৪০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে বাটার ১০০ টাকার আয়ের জন্য উৎপাদন খরচ ছিল ৫৪ টাকা।

কোম্পানি দুটির পুরো বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায়ও দেখা যায়, বাটার চেয়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেও মুনাফায় পিছিয়ে ছিল অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। সেটিরও অন্যতম কারণ ছিল উৎপাদন খরচে পিছিয়ে থাকা।

আরও প্রতিবেদন পড়ুনটাকার রেট: মুদ্রা বিনিময় হার ও অর্থনৈতিক প্রভাব

Source প্রথম আলো

Leave A Reply

Your email address will not be published.