The news is by your side.

শিখন ঘাটতি পূরণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ছুটি কমছে: নতুন পরিকল্পনা ২০২৬ থেকে কার্যকর?

সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও কলেজের ছুটি ৭৬ দিন থেকে কমিয়ে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রাথমিক প্রস্তাব।

0

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ছুটি শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন স্বস্তির, তেমনি এর একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অন্যান্য কারণে আকস্মিক ছুটি যুক্ত হয়ে অনেক সময়ই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে। সম্প্রতি এই শিখন ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ছুটি কমানোর একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

এই লেখায় যা জানবেন

  • বার্ষিক ছুটি কত দিন কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
  • কেন এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে এবং এর পেছনের কারণ কী।
  • ছুটি কমানোর পাশাপাশি কর্মঘণ্টা বৃদ্ধির পরিকল্পনা।
  • শিক্ষক সংগঠন এবং শিক্ষাবিদদের মতামত কী।
  • কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।

ছুটি কমানোর প্রস্তাব: কী বলছে সরকার?

বর্তমানে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরে গড়ে ৭৬ দিন বার্ষিক ছুটি দেওয়া হয়। তবে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় এই ছুটি ১৬ থেকে ২০ দিন কমিয়ে ৫৬ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সময় বাড়িয়ে শিখন ঘাটতি পূরণ করা।

সভার তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনিক এবং অপ্রত্যাশিত ছুটির কারণে প্রায়শই পাঠদান ব্যাহত হয়, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে, এই প্রস্তাবে আপাতত শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের কোনো পরিকল্পনা নেই।

  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: এই পরিকল্পনাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ছুটির ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসছে না। ২০২৬ সালের শিক্ষাপঞ্জি তৈরির সময় এই নতুন নিয়মগুলো যুক্ত হতে পারে।

কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত

ছুটি কমানোর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মঘণ্টা বাড়ানোর বিষয়েও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন পরামর্শক কমিটি’ ইতোমধ্যে কর্মঘণ্টা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

কমিটির মতে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই শিফটে পরিচালিত হয় এবং এসব প্রতিষ্ঠানে শেখার সময় অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। তাই শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কর্মঘণ্টা বাড়ানো অপরিহার্য।

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষক সংগঠন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সময় নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।

ড. মনজুর আহমেদ এই বিষয়ে সমকালকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি দূর করতে ছুটি কমিয়ে কর্মঘণ্টা বাড়াতে হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর দিতে হবে।”

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ছুটি কমানোর এই প্রস্তাব নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আরও কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মতামত নেওয়া হবে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে স্কুলগুলোর জন্য মোট ৭৬ দিন এবং কলেজগুলোর জন্য ৭১ দিন বার্ষিক ছুটি নির্ধারিত আছে। সরকার আশা করছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ছুটি কমানোর এই পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব হবে, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে আরও সুসংগঠিত করতে সাহায্য করবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ছুটি কমানোর এই উদ্যোগটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। তবে, এই পরিবর্তন কার্যকর করার আগে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মতামত নিয়ে একটি সুষম ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কিত আর্টিকেলকত বছর বয়স পর্যন্ত অনার্সে ভর্তি হওয়া যায়: বিস্তারিত গাইড

Leave A Reply

Your email address will not be published.